Header Ads

Header ADS

তাফসির ইবনে কাসির (Tafsir Ibn Kathir) 4-7

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

তাফসির ইবনে কাসির

হাফেজ ইমামুদ্দিন ইবনু কাসির (র:)

এক নজরে আল কোরআন এর কিছু তথ্য


পবিত্র রমজান মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ পারলৌকিক মুক্তির দিকদর্শন আল-কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামতআল-কোরআনবিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর কাছ থেকে জিব্রাইল ফেরেশতা মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয় এটি মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক মাহে রমজানে আল-কোরআনকে সর্বকালের সর্বলোকের জীবনবিধান মুক্তির সনদ হিসেবে পাঠিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
মাহে রমজানে শুধু কোরআন শরিফই নয়, বরং অন্যান্য আসমানি কিতাব এবং বহু সহিফাও নাজিল হয়েছে মাহে রমজানের সঙ্গে আসমানি কিতাবের বিশেষ সম্পর্ক আছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রাতে হজরত ইব্রাহিম (.)-এর ওপর সহিফাগুলো নাজিল করা হয়েছিল রমজান মাসের তারিখ দিবাগত রাতে হজরত মুসা (.)-এর ওপরতাওরাতনাজিল করা হয়েছিল রমজান মাসের ১২ তারিখ হজরত দাউদ (.)-এর ওপরযাবুরনাজিল করা হয়েছিল এবং মাসের ১৩ তারিখ হজরত ঈসা (.)-এর ওপরইঞ্জিলনাজিল করা হয়েছিল এবং মাহে রমজানের এক বরকতময় রাতে, অর্থাৎ ২৭ তারিখ কদরের রাতে আল-কোরআন নাজিল করা হয়েছিল’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
আল-কোরআননাজিল হওয়ার কারণে রমজান মাসের মাহাত্ম্য মর্যাদা এত বেশি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশেষ আসমানি কিতাব এবং মুসলমানদের অনুসৃত প্রধান ধর্মগ্রন্থআল-কোরআনদুই পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে প্রথম পর্যায়ে আল্লাহর আরশে অবস্থিত লওহে মাহফুজ বা রক্ষিত ফলক থেকে সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একসঙ্গে লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানবায়তুল ইজ্জাততথাবায়তুল মামুরেঅবতীর্ণ হয় ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (আল-কোরআন) কদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি’ (সূরা আল-কদর, আয়াত-) দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিব্রাইল (.)-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ওহি হিসেবে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন ঘটনা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নবুওয়াতের ২৩ বছর ধরে ধীরে ধীরে আল-কোরআন নাজিল হয়

নবী করিম (সা.)-এর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দেলাইলাতুল কদরেহেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে ফেরেশতা জিব্রাইল (.)-এর মারফত আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যক্ষ ওহিযোগে প্রথমআল-কোরআনঅবতীর্ণ হয় হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহি অবতরণের সূচনা হয়েছিল অতঃপর তাঁর মধ্যে নির্জনে উপাসনা করার আগ্রহ সৃষ্টি হয় তখন তিনি হেরা গুহায় রজনীর পর রজনী আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন অবস্থায় মাহে রমজানের এক বিশেষ রজনীতে ফেরেশতা জিব্রাইল (.) কর্তৃক তাঁর কাছে পাঁচটি আয়াত প্রথম অবতীর্ণ হয়, ‘পড়ো! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি মানুষকে এঁটে থাকা বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন পড়ো! আর তোমার প্রতিপালকই সর্বাধিক সম্মানিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না’ (সূরা আল-আলাক, আয়াত: -) দশম হিজরিতে বিদায় হজের সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সর্বশেষ ওহি অবতীর্ণ হয়, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করলাম আর তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: )
পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজান মাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে কারণেই আল্লাহ তাআলা মাহে রমজানে আল-কোরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং কদরের রাতকেই বেছে নিয়েছিলেন আল-কোরআনে রয়েছে বিশ্বমানবতার জন্য চিরশান্তি মুক্তির মহান পয়গাম আল-কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজেই গ্রহণ করে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী’ (সূরা আল-হিজর, আয়াত: )
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে কোরআন নিয়ে গবেষণা করতেন এবং মুখস্থ অংশ পুনরায় পড়তেন হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রমজান শরিফের প্রতি রাতে ফেরেশতা জিব্রাইল (.) নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়ই কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন’ (বুখারি) রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে রমজান মাসে বেশি বেশি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের আহ্বান করেছেন মাহে রমজানে মাতৃভাষায় আল-কোরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি, গবেষণা চর্চা করা উচিত হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন আল-কোরআন তিলাওয়াত করেনবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রতিটি নেকি ১০টি নেকির সমান’ (তিরমিজি)
পবিত্র রমজান হচ্ছে আল-কোরআনের শিক্ষা অর্জন বিস্তারের মাস রোজাদার মাসে খুব বেশি কোরআন তিলাওয়াত করেন তাই রোজা কোরআন শরিফ কিয়ামতের দিন তার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসেরই রয়েছে স্বতন্ত্র গৌরব মর্যাদা, আর মাহে রমজানের গৌরব অলংকার হচ্ছে রোজা আল-কোরআন দুইয়ের হক আদায়কারীদের জন্য রোজ হাশরে রোজা আল-কোরআন আল্লাহর দরবারে শাফায়াত করবে রোজা বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে দিনে পানাহার অশ্লীলতা থেকে বিরত রেখেছি, আমার তরফ থেকে তার জন্য শাফায়াত কবুল করুনআল-কোরআন বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, আমার তরফ থেকে তার জন্য শাফায়াত কবুল করুনআল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ কবুল করবেন’ (বায়হাকি)
অতএব, রোজাদারেরা যেন রোজা পালন পবিত্র কোরআনের মহিমাময় আদর্শের পরিপূর্ণ অনুশীলনের মাধ্যমে মাহে রমজানে প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারেন এবং জীবনদর্শন হিসেবে আল-কোরআনের আলোকে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারেন, জন্য সবাইকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে
. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ দাওয়াহ বিভাগ, ধর্মবিজ্ঞান অনুষদ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়


ডাউনলোড এর জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুণঃ

https://drive.google.com/open?id=13Ven15dopwN4jgdfDq_uUGJFePGfHqzK





No comments

Powered by Blogger.